নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো: আহসান হাবিব খান (অব:)
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো: আহসান হাবিব খান (অব:) |
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো: আহসান হাবিব খান (অব:) ১৯৫৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর যশোরের ঐতিয্যবাহী এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মরহুম মো: লুৎফর রহমান খান ছিলেন একজন সরকারি কর্মকর্তা এবং মাতা মরহুম রিজিয়া খানম ছিলেন গৃহিণী। ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর তিনি ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে তারুণ্যদীপ্ত মেধাবী অফিসার ক্যাডেট হিসেবে যোগদান করে ১৯৮০ সালে সাফল্যের সাথে কমিশন লাভ করেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে গৌরবময় ও সাফল্যমণ্ডিত ৩৫ বছরের কর্ম জীবনে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। পরিশ্রমী, মেধাবী ও দেশপ্রেমিক একজন কর্মকর্তা হিসেবে তিনি রেজিমেন্টাল স্টাফ অফিসার, সেনা সদর দপ্তরে জেনারেল স্টাফ অফিসার, বিভিন্ন ইউনিটের কমান্ডিং অফিসার এবং বর্ডার গার্ড রেজিমেন্টসহ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত থেকে অসাধারণ পদচিহ্ন রেখেছেন।
১৯৮৬ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে (বিএমএ) প্লাটুন কমান্ডার হিসেবে তিনি সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর নবীন অফিসার ক্যাডেটদের উৎকর্ষের আদর্শ প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। একই সময়ে তিনি বিএমএতে বিসিএস (প্রশাসন) ও বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষক হিসেবেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ওরিয়েন্টেশন কোর্স পরিচালনা করেন। তিনি সিগন্যাল ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড স্কুলের প্রধান প্রশিক্ষক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত মোজাম্বিকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত সামরিক পর্যবেক্ষক হিসাবে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেন এবং ২০০৩ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত সিয়েরালিওনে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন ফোর্স হেডকোয়াটারে সিগন্যাল সাপোর্ট কোম্পানির অফিসার কমান্ডিং হিসেবেও কৃতিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করেন।
সামরিক জীবনের পাশাপাশি ২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনে (বিটিআরসি) কমিশনার পদে পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করেন এবং সংস্থাটির ভাইস চেয়ারম্যান পদেও নিয়োগপ্রাপ্ত হন। এর আগে ২০০৯ সালে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত বিটিআরসির নিয়ন্ত্রক সক্ষমতা শক্তিশালীকরণ শীর্ষক প্রকল্পে তিনি মহাপরিচালক ছিলেন এবং ২০১০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বিটিআরসির তরঙ্গ ব্যবস্থাপনা বিভাগের মহাপরিচালকের দায়িত্ব সুনামের সাথে পালন করেন।
তিনি আমেরিকা, ইউরোপ, আফ্রিকা, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আয়োজিত সম্মেলনে সফলতার সাথে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নের (আইটিইউ) মেক্সিকো সম্মেলনে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের কাউন্সিল সদস্য হওয়ার ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং কোরিয়ার বুসানেও তিনি বাংলাদেশ দলের প্রতিনিধি হিসেবে অংশগ্রহণ করে আইটিইউ এর কাউন্সিলর পদে বাংলাদেশের দ্বিতীয়বার বিজয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন, যা ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়।
সমগ্র কর্মজীবনে তিনি পেশাগত প্রশিক্ষণ ও আনুষ্ঠানিক শিক্ষা উভয়ই ক্রমাগতভাবে দক্ষতা অর্জন করেন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ নেয়ার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রে সিগন্যাল অফিসার অ্যাডভান্স কোর্সে (এসওএসি-৮৯/৩) অসামান্য কৃতিত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘আউটস্ট্যান্ডিং ইন্টারন্যাশনাল মিলিটারি স্টুডেন্ট’ হিসেবে ভূষিত হন। এছাড়াও সফলভাবে বেশকিছু পেশাগত প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করার পাশাপাশি তিনি দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন সেমিনার, ওয়ার্কশপ এবং সিম্পোজিয়ামে কৃতিত্বের সাথে অংশগ্রহণ করেছেন। তিনি সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যবসা প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) ডিগ্রি অর্জন করেন।
সুখী পারিবারিক জীবনে তিনি দুই কন্যা ও এক পুত্রের গর্বিত পিতা।